শুক্রবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৫

Smiley face


মুন্নাফ রশিদ : মানবতাবিরোধী অপরাধের
মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী
সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে বাংলাদশের
সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া ফাঁসির রায়টি
বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রভাবশালী সকল
মিডিয়ায় আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে
পরিণত হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে
কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ
হওয়ার পরপরই খবরটি গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার
করেন যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান, ডেইলি মেইল, ফরাসি
সংবাদমাধ্যম এএফপি, যুক্তরাষ্ট্রের ইয়াহু নিউজ, সিঙ্গাপুরের স্ট্রেইট টাইমস, ভারতের
জি নিউজ, পাকিস্তানের ট্রিবিউন, কাতারের আল জাজিরাসহ বিশ্ব সংবাদমাধ্যমগুলো।
যেখানে তাঁকে একজন বিশ্ব ইসলামী নেতা হিসেবেই আখ্যা দিয়েছেন তারা।
ফরাসি সংবাদমাধ্যম এএফপি ব্রেকিং নিউজ হিসেবে খবরটি প্রকাশের মাধ্যমে
জানায়, যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একজন ইসলামী নেতার রায় রিভিউ
(পুনর্বিবেচনা) আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। জি
নিউজ, ট্রিবিউন, স্ট্রেইট টাইমস, ইয়াহু নিউজসহ প্রায় বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম এএফপির
বরাত দিয়ে খবরটি প্রচার করে। একই খবর প্রচারে আল জাজিরা তার শিরোনামে
লিখেছেন, ‘ফাঁসির বিরুদ্ধে আপিলে হেরে গেলেন বাংলাদেশের জামায়াত
নেতা’। অবশ্য, যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান শিরোনাম করেছে
একটু ভিন্নভাবে, তারা বলেছে-‘মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আপিলে হেওে গেলেন
বাংলাদেশের ইসলামী নেতা’। শিরোনামে দ্য গার্ডিয়ান বলেছে, ১৯৭১ সালের
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নৃশংসতা চালানোয় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এক ইসলামী নেতার
রায়ের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ
আদালত।
এছাড়া যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ‘গুরুতর ত্রুটিপূর্ণ’ মন্তব্য করে কামারুজ্জামানের ফাঁসি
স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস
ওয়াচ। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে নিউইর্ক ভিত্তিক সংগঠনটি বলছে, রিভিউয়ে
কামারুজ্জামানের আবেদনের ‘মেরিট’ না শুনেই আপিল বিভাগ তার রিভিউ খারিজ
করে দিয়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের জেরাকালে তারা তাদের আগের
বক্তব্যের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তা চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ
দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে আদালত। বিবৃতিতে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করে তা বাতিল
করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
এর আগে, ২১ জানুয়ারি ২০১৩ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রথম রায়ে
আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চুর ফাঁসির আদেশ হওয়ার সময়েও এসব বিশ্ব সংবাদমাধ্যম
তাকে ফলাও ভাবে প্রচার করেছিলো।
ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ে বাংলাদেশ
জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন
সাঈদীর সুপ্রিম কোর্টের দেয়া চূড়ান্ত রায়ের খবর বিশ্বজুড়ে মিডিয়াগুলোতে ফলাও
করে প্রচার করা হয়েছে। কিছু কিছু প্রতিবেদনে বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে হিউম্যান রাইটস
ওয়াচসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও মানবাধিকার কর্মীদের সমালোচনাও তুলে
ধরা হয়। বিচারপ্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও অনুসরণ করা হয়নি বলে কোনো
কোনো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল।
প্রভাবশালী গার্ডিয়ানে বলা হয়েছিল, মাওলানা সাঈদীকে কেন মৃত্যুদণ্ডের বদলে
আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হলো সে ব্যাপারে কোনো ব্যাখ্যা রায়ে দেয়া হয়নি।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যাদেরকে খুন
করার অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের একজনের ভাই সুখরঞ্জন বালী ২০১২ সালের
নভেম্বরে সাক্ষী দিতে এসে দৃশ্যত ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে অপহৃত হলে এই বিচার
বিতর্কিত হয়ে পড়ে। কয়েক মাস পর বালীকে ভারতের একটি কারাগারে পাওয়া যায়।
তিনি সেখানে বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা তাকে আদালতের বাইরে
থেকে ধরে নিয়ে ছয় সপ্তাহ আটকে রাখে। তারপর তাকে ভারতীয় সীমান্তে
ফেলে যায়। বাংলাদেশ সরকার অভিযোগটি অস্বীকার করে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট জামায়াতে ইসলামীর
শীর্ষস্থানীয় নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু
কারাদণ্ড দিয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে এই রায় দেয়া হয়েছে বলে জানা
গেছে।
একই বছরের ৫ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল
আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছিলো বিশ্ব
মিডিয়া। আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছিল, বিরোধী নেতাকে ফাঁসি দিতে প্রস্তুত
বাংলাদেশ। আরব নিউজের খবরে বলা হয়েছিল, পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের পর
কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফাঁসি হতে যাচ্ছে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ইসলামপন্থী
নেতা আবদুল কাদের মোল্লার। কানাডার সি টিভির খবরে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধের দায়ে
অভিযুক্ত বিরোধী নেতাকে ফাঁসি দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এছাড়া ভয়েস অব
অ্যামেরিকা, রয়টার্স, গলফ নিউজ, এপি নিউজ, জি নিউজ, ট্রিবিউন, স্ট্রেইট টাইমস, ইয়াহু
নিউজ, আনন্দবাজার পত্রিকা, জিনিউজসহ সকল মিডিয়ার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত
হয়েছিল। প্রভাবশালী সবকটি মিডিয়া তাদেরকে জনপ্রিয় ইসলামিক নেতা হিসেবে
খবর প্রচার করেছিল।
সেই ধারাবাহিকতায় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ
কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় বহাল রাখার খবরটিও বিশ্বের প্রায় সবকটি প্রভাবশালী
মিডিয়াতে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। (সূত্র : বাংলা সংবাদ ২৪.কম)

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Subscribe to RSS Feed Follow me on Twitter!